সাওম ( الصَّوْمُ ) (পাঠ ৮)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা ইবাদত | - | NCTB BOOK
53
53

সাওমের ধারণা

সাওম' আরবি শব্দ। এর অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে। রমযান মাসের রোযা পালন করা মুসলমানের উপর ফরজ। যে তা অস্বীকার করবে সে কাফির হবে। বস্তুত রোযা পালনের বিধান পূর্ববর্তী সকল উম্মতের জন্য অপরিহার্য ইবাদত ছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন-

يهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ :

অর্থ: "হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩)

রোযা পালন করলে মানুষ পরস্পর সহানুভূতিশীল হয়। ধনীরা গরিবের অনাহারে, অর্ধাহারে জীবনযাপনের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। ফলে তারা দান-খয়রাতে উৎসাহিত হয়। রোযা পালনের মাধ্যমে মানুষ হিংসা, বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ধূমপানে আসক্তি ইত্যাদি বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে। হাদিসে বর্ণিত আছে-

الصِّيَامُ جُنَّةٌ

অর্থ: 'সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ।' (বুখারি)

কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হলো রোযা। রোযা পালনের মাধ্যমে পানাহারে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে অনেক রোগ দূর হয়। স্বাস্থ্য ভালো থাকে। রোযার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।'

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫)। এতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, রমযান মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে বলে এটি অতি পবিত্র মাস। হাদিসে কুদসিতে আছে-

الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ

অর্থ: 'সাওম কেবল আমারই জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।' (বুখারি)। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, 'জান্নাতের রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারী ব্যতীত অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না।' (বুখারি)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, 'যে ব্যক্তি ইমানের সাথে এবং আখিরাতে সাওয়াবের আশায় সাওম পালন করে, তার অতীত জীবনের সকল (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।' (বুখারি ও মুসলিম)। এ মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। এ মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোনো রোযা পালনকারীকে ইস্তার করাবে, সে তার রোযার সমান সাওয়াব পাবে। অথচ রোযা পালনকারী ব্যক্তির সাওয়াবে বিন্দুমাত্র ঘাটতি হবে না। ফজিলতের দিক দিয়ে রমযান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং শেষ অংশ জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়ার।

সাওমের (রোযার) প্রকারভেদ

রোযা ছয় প্রকার। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, নফল ও মাকরহ।

ক. ফরজ রোযা: বছরে শুধু রমযান মাসের রোযা পালন করা ফরজ এবং এর অস্বীকারকারী কাফির। রমযানের রোযার কাযাও ফরজ। বিনা ওযরে এ রোযা ত্যাগকারী ফাসিক ও গুনাহগার হবে।
খ. ওয়াজিব রোযা: কোনো কারণে রোযা পালনের মানত করলে তা পালন করা ওয়াজিব। কোনো নির্দিষ্ট দিনে রোযা পালনের মানত করলে সেদিনেই পালন করা জরুরি।
গ. সুন্নত রোষা: রাসুলুল্লাহ (স.) যে সকল রোযা নিজে পালন করেছেন এবং অন্যদের পালন করতে উৎসাহিত করেছেন, সেগুলো সুন্নত রোযা। আশুরা ও আরাফার দিনে রোযা পালন করা সুন্নত।
ঘ. মুস্তাহাব রোযা: চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা পালন করা মুস্তাহাব। সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা পালন করা মুস্তাহাব।
৬. নফল রোযা: ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব ছাড়া সকল প্রকার রোযা নফল। যে সকল দিনে রোযা পালন করা মাকরুহ ও হারাম, ঐ সকল দিন ব্যতীত অন্য যেকোনো দিন রোযা রাখা নফল।
চ. মার্ক্সহ রোযা: মাকরুহ দুই প্রকার। (১) মাকরুহ তাহরিমি, যা কার্যত হারাম রোযা। যেমন: দুই ঈদের দিনে ও জিলহজ মাসের ১১, ১২, ১৩ তারিখে রোযা পালন করা হারাম। (২) মাকরুহ তানযিহি, যা অপছন্দনীয় কাজ। যেমন: মুহাররাম মাসের ৯ বা ১১ তারিখে রোযা পালন না করে শুধু ১০ তারিখে পালন করা। কারণ, এতে ইয়াহুদিদের সাথে সমাঞ্জস্য হয়। অনুরূপভাবে শুধু শনিবারে রোযা রাখা। কারণ, এতেও ইয়াহুদিদের সাথে মিল হয়ে যায়।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা সাওমের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছক আকারে লিখে শ্রেণিতে প্রদর্শন করবে।
Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion